
- আমি তো অফিস এ ।।কেন কি হয়েছে ?
- আজকে প্রেগনেন্সি রিপোর্ট
দিয়েছে,,
- তো কি হইছে? এইসব বলার জন্য এই
টাইমে ফোন দিছো? রাখ ফোন,,
আজাইরা..
- না মানে একটা সুখবর আছে!
- কি সুখবর?
-- তুমি বাবা হতে চলেছো আর আমি
মা ।।
- তো কি হইছে? রাখ ফোন! কাজের
ক্যাচালে বাঁচিনা আর তুমি আছো
আনন্দে। ফোন কেটে দেয় নীলয়।
নীলিমার মন খারাপ হয়ে গেল।
ভেবেছিল বাবা হওয়ার খবরটা পেলে
খুব খুশি হবে নীলয় কিন্তু আজ এমন করলো
কেন ? কোনদিন তো এমন করে না। মনের
অজান্তেই চোখে পানি এসে যায়
নীলিমার ... বিছানায় বসে কান্না
করতেছিল নীলিমা । হঠাৎ কলিংবেল
বেজে উঠলো। নিশ্চয় ফকির এসেছে।
আজকাল ফকিরা যেকোন সময় এসে
কলিংবেল টিপে। চোখের পানি
মুছতে মুছতে দরজা খুলে অবাক হয়ে যায়
নীলিমা ।। ওর সামনে দাড়িয়ে আছে
নীলয় ।। - একি তুমি?
- হ্যাঁ আমি!! কেন আসতে মানা নাকি
- কেন আপনি নাকি অফিস এর কাজে
অনেক ব্যস্ত ।।
- ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই।
- ইস আসছে এখন পিরিত দেখাতে ।।
- হা আসছি তো ...
বলেই নীলয় নীলিমাকে কাছে টেনে
নিল ।।
- এই,,,এই,,,কি করছো? ব্যথা পাবো তো ।।
সবাই দেখবে তো
- কেউ দেখবে না ।। তলে তলে এই কাজ
কবে করলে? আমাকে জানালেও না ।।
রাগ করলাম ।।
-- ইসস,,, তুমি বুঝি জানোনা তাই না --
না জানিনা!
-- ওরে আমার গুলু গুলু বাবু কিচ্ছু
জানেনা। ভেজা বিড়াল -- আমি কি
একটু আমার আব্বু/আম্মুর সাথে কথা বলতে
পারি?
-- না এখন না। ও ঘুমাচ্ছে এখন।
-- না আমি এখনই কথা বলবো।
-- হুম
-- আব্বু তুমি কি করছো? ঘুমাচ্ছো? তুমি
কবে আসবা ? তোমার আম্মু কত খারাপ
দেখছো? তুমি আসবে ও আমাকে আগে
বলেনি। তুমি আস তারপর তোমার
আম্মুকে দু'জন মিলে আচ্ছামত পিটাবো।
তোমার কষ্ট হলে আমাকে বলবা কিন্তু
হ্যাঁ? এখন ঘুমাও আব্বু? উম্মম্মাহ,,
উম্মম্মাহ,,,
- এই এই কি করছো? ছাড়ো তো,,,
নীলিমার চোখের পানি শুকিয়ে
গেছে ... নীলয় এমন সময় বাসায় আসবে
নীলিমা কল্পনাও করেনি।
- এই নেও তোমার গিফট!!
- কি গিফট?
- খুলে দেখ তো!
- এগুলো তো বাসের টিকেট!
- হ্যাঁ,, আজ সন্ধ্যায় আমরা কক্সবাজার
যাচ্ছি সমুদ্র দেখতে।
-- সমুদ্র দেখতে কেন?
-- বিয়ের আগে বলেছিলে তোমার
পেটে যখন বাচ্চা আসবে খবর পাবে
তখন সমুদ্র দেখতে যাবে। আমি সে
কথাটা ভুলিনি।
.............. ................ .............
- মনে আছে নীলিমা ?
আমি বলেছিলাম, আমরা সারাক্ষণ
হাত ধরে সমুদ্রপাড়ে হাটবো। হাটতে
হাটতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবো ঠিক
তখন সন্ধ্যা নেমে আসবে। তোমাকে
নিয়ে সূর্যাস্ত দেখবো। সূর্য যখন ডুবে
যাবে তখন সন্ধ্যের সমুদ্রের হীম শীতল
বাতাস বইতে শুরু করবে। আমরা দু'জন
সমুদ্রপাড়ে গিয়ে বসবো। তুমি আমার
কোলে মাথা রেখে শুইবে। কিভাবে
দিনের আলো রাতের অন্ধকারে
মিলিয়ে যায় তা দেখবো। সন্ধ্যায়
ঢেউগুলো ক্লান্ত হয়ে আস্তে আস্তে
কিভাবে আছড়ে পরে তা দেখবো।
আমি গল্প করবো তুমি তখন আস্তে আস্তে
ঘুমের আচরে মাতাল হয়ে ঢুলে পড়বে।
আমি তখন কোলে করে রুমে নিয়ে
যাবো।
- হা সব মনে আছে আর আমার সবচেয়ে
ভাল লাগছে তুমিও মনে রেখেছ ।।
- আচ্ছা এখন ঘুমাও ।। নীলিমা নীলয়ের
কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরল ।। ওরা
যাচ্ছে কক্সবাজার ।।
- এই উঠো কেউ এতো ঘুমায় ... চোখ খুলে
নীলিমা দেখতে পেল নীলয় ওর দিকে
তাকিয়ে আছে... নীলিমা বলল - - কি
হয়েছে ?
- আমরা কক্স-বাজার চলে এসেছি ।।
নামো ।।
দুজন নেমে একটা রিক্সা নিল ।। নীলয়
নীলিমার দিকে তাকিয়ে দেখতে
পেল পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মুখে অসাধারণ
পরিতৃপ্তি…নীলয় তাকিয়ে রইল - - এই
কি দেখছ ?
- তোমাকে ।।
- হইছে আর বলা লাগবেনা ।। আচ্ছা
আমরা কই যাচ্ছি ।।
- কেন হোটেল এ ।।
- না না আমি আগে সমুদ্র দেখব ।।
- হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে আসি আগে ।।
- নাহ নাহ হবে না ।।
- আচ্ছা বাবা ।। এই রিক্সা আগে বীচ এ
চল
।।
২ জন দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছে সমুদ্রের
ফেনা আর ঢেউ আছড়ে পরার শব্দ ।।
নীলিমা নীলয় কে রেখেই দৌড়
দিলো সমুদ্রের কাছে... তার ২ হাত
ভরা মেহেদির রঙ...নীলয় দূর থেকে
দেখতে লাগলো... হুট করে একটা উপদেশ
ও দিয়ে ফেলল ও “ বেশি দূর যেয়ো না,
চলে আসো ”